Tuesday, June 23, 2020

হোমিওপ্যাথে আশার আলো করোনা চিকিৎসায়

(নীচে Read More বাটনে ক্লিক করে সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি পড়ুন)
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন হোমিও চিকিৎসকরা। এতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তারা। তাদের দাবি, হোমিও ওষুধ সেবনের পর দ্রুততম সময়ে অর্ধশতাধিক করোনা রোগী সেরে উঠেছেন।
হোমিও চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা রোগের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি; কিন্তু প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে হোমিওপ্যাথি প্রয়োগ করে করোনা রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
তাদের মতে, করোনা রোগীদের যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার সব ক’টির সঙ্গেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মিল রয়েছে। তা ছাড়া কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমও বৃদ্ধি করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, হোমিওপ্যাথির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ফলে চিকিৎসায় সুফল না এলেও ক্ষতির আশঙ্কা শূন্য। হোমিওপ্যাথি ওষুধের মূল্যও সাধারণের হাতের নাগালে।
একজন চিকিৎসক জানান, মার্চের শুরুতে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর ২১ জন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তাদের পরামর্শে দেশের ৬৪টি জেলায় হোমিও চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে হোমিও মেডিক্যাল কলেজগুলোর আউটডোরেও চিকিৎসা মিলছে।

হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই করোনা রোগীদের ওপর হোমিও চিকিৎসা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী এবং বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা প্রাথমিক সংক্রমিতদের ওপরেও হোমিও ওষুধ প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে হোমিওপ্যাথি বোর্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় পুলিশের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে শুরু থেকেই আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি আলাদা করে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য। তবে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে করোনা রোগী এবং ওই কম্পাউন্ডে বসবাসকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত চিকিৎসার বাইরে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা দাবি করেছেন। এ জন্য একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অনানুষ্ঠানিকভাবে জড়িত হয়েছেন হাসপাতালটির সাথে এবং হাসপাতালের আউটডোরেই ডিসপেনসারি দেয়া হয়েছে তার। তাদের দাবি, হোমিও ওষুধ সেবনের পর দ্রুততম সময়ে অর্ধশতাধিক করোনা রোগী সেরে উঠেছেন।
হোমিও চিকিৎসক রাশিদুল হক জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে গত ১৬ মে থেকে পুলিশ হাসপাতালের সাথে জড়িত হয়েছেন। তার দাবি, তিনি করোনার কোনো চিকিৎসা করছেন না তবে প্রতিরোধমূলক ওষুধ দিচ্ছেন, যা তিনি মনে করছেন কার্যকর হচ্ছে। তিনি জানান, এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যকে প্রতিরোধমূলক ওষুধ দিয়েছেন। তাদের কেউ এখনো করোনা পজেটিভ হননি। আর ৫০ জন কোভিড-১৯ রোগীকে ওষুধ দিয়েছি, যা সেবন করে এসব রোগীরা তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে সুস্থ হয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, যে ওষুধ দিচ্ছেন তা প্রতিরোধমূলক এবং এটি নিয়ম মতো সেবন করলে দেহে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও স্বরাষ্ট্রসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়েও তিনি চাহিদা পেয়ে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সরবরাহের দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, করোনার কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশে এর চিকিৎসা হচ্ছে এবং অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রোগীরা প্রচলিত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি নিতে পারছেন এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যারা আগ্রহী হন তাদেরকেই আমি ওষুধ দিচ্ছি এবং অনেকেই জানিয়েছেন তারা উপকার পেয়েছেন। যেসব লক্ষণ অর্থাৎ জ্বর, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি- এসবের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয় বলেও জানান তিনি।
তবে পুলিশ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে হোমিও চিকিৎসা শুরু করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ডিআইজি হাসান-উল হায়দার। তিনি বলেন, এটা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়নি। কারণ হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে করোনা থেকে সেরে ওঠার বিষয়টি এখনো পরীক্ষিত নয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাই মেনে চলবেন, তবে কোনো পুলিশ সদস্য যদি স্বেচ্ছায় হোমিওপ্যাথি নিতে চায়, সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা এটাকে উৎসাহিত করছি না, আবার নিষেধও করছি না। তবে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছেÑ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল একটি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা শুরুর কোনো সুযোগ নেই।
করোনা চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা: দিলীপ রায় বলেন, হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে করোনা থেকে প্রতিরোধে দেহের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু ওষুধ রয়েছে। তা ছাড়া করোনা সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে কার্যকরভাবে বহু বছর ধরেই চলে আসছে।
পুলিশ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের হোমিও চিকিৎসক রাশিদুল হক জানান, তিনি পুলিশ হাসপাতালের ৫০ জন করোনা রোগীর ওপর সাত দিনের একটি হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে সফল হয়েছেন। অবশ্য হোমিওপ্যাথির পাশাপাশি তাদের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসাও চলেছে বলে জানান তিনি।
অপর দিকে ঢাকার ইসকন মন্দিরের ৩৬ জন সেবক মার্চের গোড়ার দিকে কারোনা আক্রান্ত হন। কিন্তু তাদের কেউই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ঘরে বসে তারা হোমিও চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি তারা হলুদ, গোলমরিচ, আদা ও মধু সেবনের মতো আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিয়ে সবাই পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন বলে একজন জানান।
হোমিও চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ নামের একটি হোমিও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। এটি সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন দৈনিক চার-পাঁচবার সেবন করতে হবে। তবে করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করা হবে ভিন্নভাবে। সে ক্ষেত্রে উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ দেয়া হবে। যদি গলাব্যথা হয় তবে ব্রাইনিয়া সেবন করতে হবে সাত দিন। শ্বাসকষ্ট হলে আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ এবং কারগোভেজ ক্যামফোর। কাশি হলে টিউবার ক্যালিনাম এবং পেটের সমস্যায় জেল সিমিয়াম সেবনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভালো ফল পেতে জার্মানি থেকে আমদানিকৃত নির্ভরযোগ্য হোমিও ওষুধ সংগ্রহের কথা বলা হচ্ছে।


No comments:

Post a Comment