প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ নিয়ে মানুষের মাঝে বাড়ছে ভয়। সেই সাথে কোভিড-১৯ আক্রান্তসহ সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে গিয়ে সেবা নেয়া হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। মহামারির এমন পরিস্থিতিতে সমাধান হিসেবে দেখা দিয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবীরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আসায় করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দেশে টেলিমেডিসিন সেবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বর্তমানে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ফেসবুক ও ওয়েবপেজ, অনলাইন অ্যাপস এবং স্কাইপের মতো বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি (স্বাচিপ) ডা. ইকবাল আর্সনাল বলেন, ‘দেশে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্যসেবার এক শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে যা কোভিড-১৯ এর পরেও ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি বলেন, স্বাচিপ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাথে মিলে ৫০০ ফোন নম্বরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক টেলিমেডিসিন পরিষেবা দেয়া শুরু করেছে।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন অনেক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশে টেলিমেডিসিন পরিষেবা দেয়ার জন্য প্রতিটি মেডিকেল কলেজে নির্ধারিত হটলাইন নম্বর এবং সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোবাইল ফোন নম্বর রয়েছে।
স্বাচিপ সভাপতি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য মানুষকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ফোন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডা. ইকবাল আর্সলান মানুষকে চিকিৎসক এবং হটলাইনগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ফোন কল করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, তারা দেশের অধিকাংশ জেলা শাখায় অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ শুরু করেছেন। ‘অধিকাংশ জেলা শাখায় আমরা মোবাইল ফোন, ফেসবুক, ওয়েবপেজ, অনলাইন অ্যাপস এবং স্কাইপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া শুরু করেছি।’
চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে মোবাইল ফোনে সেবা দিচ্ছেন এবং প্রয়োজনে রোগীদের অনলাইনে আসতে বলছেন বলে জানান তিনি।
ডা. এহতেশামুল হক বলেন, বিএমএ কোভিড-১৯ চিকিৎসকদের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করবে। ইতোমধ্যে ৪০০ চিকিৎসক এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছেন।
মুগদা মেডিকেল কলেজের ডা. আবু সাঈদ শিমুল জানান, তারা একদল চিকিৎসক নিয়ে বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য অনলাইনে বাবা-মাকে সহায়তা করতে ‘চাইল্ড করোনার এওয়ারনেস-বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার সদস্য তাদের পেজে যোগদান করেছেন এবং তারা প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ জনকে পরিষেবা প্রদান করেন।
‘আমরা ১০৫ চিকিৎসক এ ফেসবুক পেজে প্রাথমিকভাবে লিখিত প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে পরামর্শপত্র সরবরাহ করি এবং প্রয়োজনে রোগীদের অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য ভিডিও কলে যাই,’ তিনি যোগ করেন।
ডা. শিমুল বলেন, ২৪ মার্চ তারা একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ‘কোভিড টেস্ট ফর বিডি’ চালু করেছেন, যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।
কুমিল্লার সার্জন ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলার অনেক রোগী ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলায় বিএমপি’র ১০টি মোবাইল ফোন নম্বর, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের ১০টি মোবাইল নম্বর, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পাঁচটি নম্বর, সার্জন সোসাইটির কয়েকটি নম্বর এবং কুমিল্লা সদর হাসপাতালের একটি নম্বর পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য রয়েছে।
তিনি জানান, সেবার জন্য তারা এ নম্বরগুলোতে কুমিল্লার বাইরে থেকেও ফোন কল পেয়ে থাকেন।
টেলিফোনের মাধ্যমে রোগীদের পরামর্শ দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল দেশে ‘কোভিড-১৯ সলিউশনস বাংলাদেশ’ নামে প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সাইফুল্লাহ বলেন, প্ল্যাটফর্মের মূল কাজ হলো কোভিড বা নন-কোভিড রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে সহায়তা করার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দেয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও (বিএসএমএমইউ) সম্প্রতি হটলাইনের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু করেছে। হটলাইন নম্বর ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ এর মাধ্যমে লোকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারবেন।
Source: https://dailysangram.com
No comments:
Post a Comment